ছোট্ট শিশুর চোখের সমস্যা

ছোট্ট_শিশুর_চোখের_সমস্যাঃ

Congenital_Nasolacrimal_duct_obstrucrion:

১০ দিন বয়সের শিশুটি মায়ের কোলে চড়ে চেম্বারে এসেছিলো, তার অসুবিধা ছিলো জন্মের পর থেকেই বাম চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি ঝরছে, মাঝে মাঝে হলুদ ডিসচার্জ ও আসে। আমাদের দেশের শতকরা ছয়জন বাচ্চার চোখ থেকে পানি পড়ে। এটা আমরা স্বাভাবিকভাবে পেয়ে থাকি। তবে ইদানীং এই রোগটি খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। এটাকে রোগ হিসেবে বলছি এই কারণে যে, সঠিক সময়ে এর যদি সঠিক চিকিৎসা করা না হয়, তবে নানা ধরনের জটিলতায় শিশুর দৃষ্টির ক্ষতি হতে পারে।

চোখ দিয়ে পানি পড়ার কারণ বলতে গেলে আমরা প্রথম যেটা বুঝি, আমাদের চোখের ঠিক কোণায় একটি গ্রন্থি আছে, যেটাকে ল্যাকরিমাল গ্রন্থি বলে। এই ল্যাকরিমাল গ্রন্থি থেকে পানি বের হয়। সেটা চোখের মণিকে সিক্ত রাখে, চোখ সিক্ত রাখে। এরপর চোখের কোণায় দুটো ছিদ্র রয়েছে, যাকে বলা হয় পাংটা, এরপর একটি পথ রয়েছে এর মধ্য দিয়ে পানি নাকের ভেতর দিয়ে চলে যায়। এটি স্বাভাবিক পদ্ধতি।

যদি কোনো কারণে এই পথ বন্ধ থাকে, শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় জন্মগত কারণে ছিদ্রটি তৈরি হয়নি, সে কারণে ছিদ্রের ভেতর দিয়ে না বেরিয়ে পানিটা গড়িয়ে আসে। আবার দেখা যায়, এই রাস্তা দিয়ে ঢুকল ঠিকই, তবে স্যাক নামক একটি জায়গা আছে, যাকে বলা হয় ল্যাক্রিমাল স্যাক। এটি থলের মতো, পানিটা এসে এই থলির ভেতর জমা থাকে। যদি থলিতে কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে পানি আর পেছনের দিক থেকে নাকে যেতে পারবে না।
সাধারণত পূর্ণ বয়স্ক বাচ্চা বা ফুল টার্ম বেবি যারা জন্মগ্রহণ করে, সে সমস্ত শিশুদের রাস্তাটি খুলে যায় জন্মের পরেই। তবে মাঝে মাঝে কিছু ফুল টার্ম শিশু বা যদি অপরিপক্ব শিশু হয়, তখন পথটি তার পরিষ্কার হয় না। পরিষ্কার না হলে, পানি তার পথ দিয়ে যেতে পারবে না। এখানে জমা হয়ে একটি সংক্রমণের তৈরি করবে।

আবার দেখা যায়, ছোট ছোট বাচ্চাদের হয়তো বা কোনোভাবে হাতের আঙুল বা নখ লেগে, কালো মণিতে ক্ষত হলো। এই ক্ষত যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেওয়া হয়, পরবর্তীকালে কালো মণির জন্য তার দৃষ্টিহানি হবে।

আবার চোখের যদি চাপ বেড়ে থাকে, তবে তার প্রাথমিক পর্যায়ে চোখ দিয়ে পানি আসে। সুতরাং শিশুর চোখের পানি পড়লে অনেক গুরুত্ব দিতে হবে।

শিশুর চোখে পানি পড়া যে একটি রোগের কারণে বা সমস্যার কারণে হচ্ছে, সেটি কী করে বাবা-মা বুঝবে?
আসলে যখনই চোখ দিয়ে পানি পড়বে, তখনই চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে নেওয়া প্রয়োজন। আরো ভালো হয় শিশু চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে। প্রাথমিক অবস্থায় আসলে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, চোখের কোনো জটিলতা হবে না, ক্ষতি হবে না।

প্রায় শতকরা ১০ ভাগ বাচ্চার নেত্রনালির রাস্তার পেছনে যে ন্যাজোল্যাক্রিমাল ডাক্ট, এটা বাধাগ্রস্ত থাকে। অর্থাৎ পুরোপুরি খোলেনি। সাধারণত জন্মের চার সপ্তাহ পরে পানি পরাটা বেশি খেয়াল করা যায়। প্রথম দিকে একটু কম থাকে। কারণ ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি যেটা থেকে পানি বের হয়, সেটা একটু কম থাকে। যেহেতু পানিটা কম বের হয়, তাই প্রথম চার সপ্তাহে অল্প অল্প করে আসতে পারে বা না-ও আসতে পারে। তবে চার সপ্তাহের পর যখন মা দেখবেন তার বাচ্চার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শুধু ম্যাসাজ করলেও অনেক ভাগ শিশু ভালো হয়ে যায়।

➡️প্রাথমিক পর্যায়ে কি ধরনের চিকিৎসা করা প্রয়োজন?

উত্তর : চিকিৎসকেরা রোগী প্রথমে আসলে, দেখেন আসলে কোন কারণে তার সমস্যা হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, বাচ্চাদের চোখের যে দুটো ছিদ্র, যাকে বলা হয় পাংটা, সেটি হয়তো বন্ধ রয়েছে, তখন একে খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আর যদি দেখা যায় সেটি ঠিক আছে, তখন দেখা হয় কালো মণিতে কোনো সমস্যা আছে কি না, বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না। তার চোখের চাপ ঠিক আছে কি না। কী কারণে সমস্যা হচ্ছে সেটি বের করার চেষ্টা করা হয়।

যদি নেত্রনালি, অর্থাৎ যে রাস্তা দিয়ে পানিটা বের হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে সমস্যা, তখন বলা হয় ম্যাসাজ করার জন্য। ৯৬ থেকে ৯৮ ভাগ বাচ্চার শুধু এই নেত্রনালিতে যদি যথাযথ ম্যাসাজ করা যায় তাহলে ঠিক হয়ে যায়। আমরা চিকিৎসকরা বলে দিই, চোখের ঠিক কোণায় একটু চাপ দেবেন। কয়েকবার চাপ দেওয়ার পর দেখা যাবে, চোখ দিয়ে পানি একটু বেশি আসবে। তখন একটু তুলা ভিজিয়ে চিপে পানি মুছে নেন। মুছে নেওয়ার পর আবার একটু আলতো চাপ দিয়ে পাঁচ থেকে দশবার ম্যাসাজ করতে হবে। যদি এই ম্যাসাজ করা হয়, এতেই অনেকটা ভালো হয়ে যায়। চোখের কোনা থেকে নাকের পাশ বরাবর উপর থেকে নিচে হাল্কা চাপ দিয়ে মাসাজ করতে হবে। (ছবিতে যেভাবে দেখানো হয়েছে) প্রতিবার ১০ বার করে দিনে ২-৩ বার। ইনফেকশন হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসক এর পরামর্শ মতে চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হতে পারে।

তবে অনেকে ভয়ের কারণে, বাচ্চা ব্যথা পাবে, এই ভেবে চাপ দিয়ে ম্যাসাজ না করে, আস্তে আস্তে করে টেনে ম্যাসাজ করেন। তাতে কোনো উপকার হয় না। অবশ্যই সঠিক প্রক্রিয়ায় মেসেজ করতে হবে এবং অবশ্যই চাপ দিতে হবে, ঠিক কোণাতে। চোখের বাইরে নেত্রনালি যেখানে মিলছে ঠিক সেই জায়গায়।

ম্যাসাজের ফলাফল এক বছর পর্যন্ত, ৯৬ থেকে ৯৮ ভাগ পাওয়া যাবে। এক থেকে দুই বছরের ক্ষেত্রে যদি রোগীর কোনো উন্নতি না হয় সেক্ষেত্রে দুই বছরের মধ্যে কোনো একসময়ে অজ্ঞান করে একটি তারের মতো যন্ত্র রয়েছে, সেটি দিয়ে সেই রাস্তাটিকে পরিষ্কার করে দেয়া হয়। এটি করলে যাদের সমস্যাটি রয়ে গেছে তাদের মধ্য থেকে ৯৫ ভাগ শিশুর বিষয়টি ভালো হয়ে যায়। আবার যাদের এটি করার পরও ভালো হলো না, তাদের ক্ষেত্রে আগে বলা হতো, বড় হলে কেটে অস্ত্রোপচার করার জন্যে, একে বলা হয় ডিসিআর বা ডেকরোসিস্টোরাইনোসটোমি। আবার সার্জারি না করে এখন ইনটুবিশনও করা যায়।

ডাঃ তাজরীন জাহান
Advisor
20 Minute Medical

1 Shares:
Leave a Reply
You May Also Like
Read More

কনজাংটিভাইটিসে করণীয়

কনজাংটিভাইটিসে করণীয় চোখের এই সমস্যার প্রচলিত নাম ‘জয়বাংলা’। অনেকে একে ‘চোখ উঠেছে’ বলেও ব্যাখ্যা করে থাকেন। তবে চিকিত্সকেরা…
Read More

শিশুর পরিপূরক খাবার কিভাবে শুরু করবেনঃ

মায়েদের_জিজ্ঞাসাঃ কিভাবে সলিড দেয়া শুরু করবোঃ নতুন মায়েদের সবচেয়ে কমন যেই জিজ্ঞাসা তা হলো, ছয় মাস বয়সী বাচ্চার…
Read More

★শীতে শিশুর ব্রংকিওলাইটিস★

শীতে শিশুর ব্রংকিওলাইটিসঃ  ব্রংকিওলাইটিস ভাইরাসজনিত একটি রোগ। জীবাণু হলো আরএসডি ভাইরাস। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা-পেরা ইনফ্লুয়েঞ্জা, এডিনো, রাইনো ও মাইকোপ্লাজমাও…