ফার্স্ট এইড বক্স

★★প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপকরণ:
ফার্স্ট এইড কিট★★

বিপদ কখনো বলে কয়ে আসেনা। তাই সাবধানতার অংশ হিসেবে প্রতিটি বাড়িতেই ফার্স্ট এইড বক্স বা ফার্স্ট এইড কিট থাকা উচিত, যাতে যেকোনো দুর্ঘটনার প্রাথমিক ধাক্কাটি সামাল দেয়া যায়। ফার্স্ট এইড বক্স দোকানেও কিনতে পাওয়া যায় তবে নিজে তৈরি করলে পরিবারের প্রতিটি সদস্য এর চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংরক্ষণ করা যায়।

🔘🔘 স্বচ্ছ, পরিস্কার, এয়ার টাইট কোনো প্লাস্টিকের বক্স নিতে পারেন অথবা জিপ পাউচ ব্যাগ নিতে পারেন। স্বচ্ছ হলে বাইরে থেকে মেডিসিন দেখা যায়, যা প্রয়োজনে সহজেই খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এবং তাতে বড় বড় করে ফার্স্ট এইড বক্স লিখে রাখলে সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে।

🔘🔘 বক্সটি শিশুদের নাগালের বাইরে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে। কিন্তু ঘরের সবাই যেনো সে জায়গাটি সম্পর্কে জানে, এমনকি ছোট শিশুরাও জানবে যে এই জায়গাটায় ফার্স্ট এইড বক্স থাকে, যাতে ইমার্জেন্সি সময়ে সবাই খুঁজে পেতে পারে।

🔘🔘 বাসার সবাইকে এবং বড় বাচ্চাদের শুধু বক্সটি সম্পর্কে জানালেই হবে না এর ভেতরের ঔষধ গুলোর ব্যবহার সম্পর্কেও জানাতে হবে যে কোনটা কি কারণে ব্যবহার করা হয়, কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। প্রয়োজনে ব্যবহারবিধির একটা ছোট লিফলেট লিখে বক্স এ রাখা যেতে পারে।

🔘🔘 ফার্স্ট এইড বক্স এর মেডিসিন গুলো দীর্ঘ সময় কাজে নাও লাগতে পারে কিন্তু নিয়মিত সেগুলো চেক করতে হবে। এক্সপায়ারড ডেট পার হয়ে গেলে সেগুলো রিপ্লেস করে নতুন মেডিসিন রাখতে হবে।

🔘🔘 কি কি রাখতে হবে বক্সে তার একটি ছোট চেকলিস্ট তৈরি করা যেতে পারে ফার্স্ট এইড বক্স তৈরি করার আগে। ব্যান্ডেজ, বেসিক মেডিকেল টুলস, ওষুধ এগুলোর জন্য বক্সে আলাদা জায়গা রাখা যেতে পারে।  বাইরে যাওয়ার জন্য গাড়িতে বা ট্রাভেল কিট হিসেবে পোর্টেবল ফার্স্ট এইড পাউচ বানানো যেতে পারে।

🔘🔘 ফার্স্ট এইড বক্সে যা থাকবেঃ
★গজ ব্যান্ডেজ : খুবই দরকারি একটি উপকরণ যা সিলিন্ডার-রোল আকারে পাওয়া যায়।

★তুলা বা কটন : নিরাপত্তার জন্য খোলা তুলার তুলনায় প্যাকেট তুলা ব্যবহারই ভালো।

★ক্রেপ ব্যান্ডেজ : হাড় ফেটে গেলে বা কোথাও মচকে গেলে ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহারে ব্যথা কমে আসে।

★সার্জিক্যাল ব্যান্ডেজ : সহজেই কোনো ক্ষতের ওপরে এই ব্যান্ডেজ আটকে রাখা যায়। তবে খুব ভালো ব্যান্ডেজ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয় না।

★কাঁচি : গজ, ব্যান্ডেজ ইত্যাদি কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী  কাপড় কাটার জন্য কাঁচি দরকার।

★চিমটা বা ফরসেপ : অনেক সময় ক্ষতস্থানে ক্ষুদ্র আঠালো ময়লা থাকে যা তুলা দিয়ে মুছে ফেলা যায় না, আবার পানি দিয়েও পরিষ্কার হয় না। এ ক্ষেত্রে চিমটা কাজে আসতে পারে।

★সার্জিক্যাল গ্লাভস : ক্ষতস্থান ময়লা হাত দিয়ে পরিষ্কার করার চেয়ে এটা পরে পরিষ্কার করা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত।

★জীবাণুনাশক বা অ্যান্টিসেপটিক: ফার্স্ট এইড বক্সে স্যাভলন বা ডেটল, হেক্সিসল নানা রকম অ্যান্টিসেপটিক রাখতে পারেন। কিছু অ্যান্টিসেপটিক ক্রিমও রাখতে পারেন যা বেশ উপকারী।

★ওষুধপথ্য : প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, ব্যথানাশক ওষুধ, পেট খারাপ, মাথা ঘোরা ও বমির ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন, বার্ন ক্রিম, ব্যথানাশক মলম, অ্যালার্জির ওষুধ ইত্যাদি বক্সে থাকলে বিশেষ মুহূর্তে খুবই কাজে লাগে। এছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও বক্সে রাখা যেতে পারে।

★থার্মোমিটার : শরীরের তাপমাত্রার পরিমাপ করার জন্য এর বিকল্প নেই। খুব সহজেই এটি দিয়ে জ্বর মাপা যায়।

★রক্তচাপ মাপার যন্ত্র/ব্লাড প্রেশার মেশিন

★পালস অক্সিমিটার : করোনা মহামারীতে কারও জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট হলে এটি দিয়ে সহজেই রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা ও হৃৎস্পন্দনের মাত্রা জানা যায়।

★গ্লুকোমিটার : কারও রক্তের শর্করা কমে বা বেড়ে গিয়ে তিনি অচেতন হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকর একটি উপকরণ হতে পারে যা দিয়ে রক্তে শর্করার পরিমাপ করা সম্ভব। এছাড়া বক্সে টর্চ, সেফটি পিন, মাইক্রোপোর, দুই-তিন কোনা বড় ও মাঝারি আকারের কাপড় ইত্যাদিও রাখা যায়।

আরও যা কাজে লাগে

*পানি
*বরফ
*মাঝারি আকারের শক্ত কাঠ
*চিনি বা গ্লুকোজ।
চলুন জেনে নেয়া যাক কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কেঃ

🔘হঠাৎ কেটে গেলেঃ

ছোট ও অগভীর স্থান থেকে রক্তপাত তেমন হয় না। রক্তপাত হলে ক্ষতস্থানটি চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। আক্রান্ত স্থানটি এমনভাবে রাখুন, যেন তা হৃৎপিণ্ডের অবস্থান থেকে একটু উঁচুতে থাকে। বেশি নড়াচড়া করলে রক্তপাত বাড়তে পারে। রক্তপাত বন্ধ হলে পরিষ্কার তুলা বা গজের সাহায্যে অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে নিন। এরপর ব্যান্ডেজ করে রাখুন। বেশি রক্তপাত হলে বা ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়লে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

🔘হঠাৎ পুড়ে গেলেঃ

ত্বকে গরম পানি পড়লে, কোনো কিছুর ছ্যাঁকা বা গরম ভাপ লাগলে আক্রান্ত স্থানটি কলের পানির নিচে রাখুন অন্তত আধা ঘণ্টা। এরপর মলম বেশ পুরু করে লাগিয়ে রাখুন আক্রান্ত স্থানে। অনাক্রান্ত চামড়ায় এ মলম লাগাবেন না। এভাবে সারা দিনে দু-তিনবার মলম লাগিয়ে রাখুন। তবে গোসলের সময় মলমের স্তর ধুয়ে ফেলে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।

🔘হঠাৎ আঘাতঃ

হঠাৎ ব্যথা পেলে আক্রান্ত স্থান বরফ বা ঠান্ডা পানির বোতল দিয়ে চেপে ধরতে পারেন। তবে এগুলো সরাসরি প্রয়োগ করবেন না, পরিষ্কার কাপড়ে পেঁচিয়ে নিয়ে ব্যবহার করুন। এরপর প্যারাসিটামল ওষুধ সেবন করতে পারেন।

🔘শারীরিক অসুস্থতায়ঃ

জ্বর এলে প্রথমেই জ্বর মেপে নিন। তাপমাত্রা কত পেলেন এবং তা কোন সময়ে মেপেছেন, এ তথ্যগুলো লিখে রাখাই সবচেয়ে ভালো; পরবর্তী সময়ে কাজে লাগতে পারে। হালকা গরম পানি দিয়ে শরীর-মাথা মুছে নিন। সম্ভব হলে হালকা গরম পানিতে গোসল করে নিন। এসবের পরও জ্বর না কমলে প্যারাসিটামল ওষুধ সেবন করুন।

দুর্ঘটনাজনিত বা অন্য যেকোনো কারণে আরও গুরুতর শারীরিক ক্ষতিগ্রস্তরা ও সংকটাপন্ন হওয়ার হাত থেকে রোগীকে বাঁচাতে প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে। প্রাথমিক চিকিৎসা তথা ফার্স্ট এইডের মূল লক্ষ্যই হলো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাপনায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুহার হ্রাস করা। প্রাথমিক চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো ফার্স্ট এইড বক্স।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের ২য় শনিবার  ফার্স্ট এইড ডে বা প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

ডাঃ তাজরীন জাহান
Advisor
20 Minute Medical


























10 Shares:
Leave a Reply
You May Also Like
Read More

হার্নিয়া কথোপকথন (A-Z প্রশ্নোউত্তর)

হার্নিয়া কথোপকথনঃ জাহিদুল হাসান কিরনঃ শরীরের অপেক্ষাকৃত নরম মাংসপেশি যখন শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসতে চায় তখন তাকে চিকিৎসা…