Sex Education Part 3/ শিশুর সেক্স এডুকেশন ৩য় পর্ব/

পর্ব ৩

#বাচ্চাদের কিভাবে শেখাবেন বা কাউন্সিলিং করবেন সেক্সুয়াল এবিউস নিয়েঃ

সেক্স এডুকেশন নিয়ে লেখার পরেই অনেকেই প্রশ্ন করেছেন বাচ্চাদের কিভাবে গুড টাচ(ভালো আদর), ব্যাড টাচ(খারাপ আদর), শেখাতে পারেন। এটা কিন্তু খুবই জরুরি একটি বিষয়। যদি আপনি বাচ্চাদের এটা নিয়ে পরিস্কার ধারণা না দেন অথবা লজ্জা বা জড়তা এবং ভয়ের মধ্যে রাখেন, বাচ্চাটির সারাটি জীবন এই ফোবিয়া নিয়ে পার হতে পারে। আমার আগের লেখায় কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম এই বিষয়ে। আজ একটু বিস্তারিত বলতে চাই যাতে আপনাদের বাচ্চাদের বুঝিয়ে বলতে সুবিধা হয়।

বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে বা বাইরে যাচ্ছে, আপনার চোখের আড়ালে থাকছে, তখন তাদের সাথে কি ঘটছে অথবা তাদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে হলেও প্রতিদিন এই প্রশ্ন গুলো তাদের করুন এবং তাদের শেখান।

sex education 3

১) আমাদের বডি পার্টস বা শরীরের অংগগুলো কয় ধরনের?

👉দুই ধরনের, পাবলিক পার্টস বা যেগুলো জামার বাইরে থাকে, আর প্রাইভেট পার্টস বা যেগুলো জামার ভেতরে ঢাকা থাকে।

২)প্রাইভেট পার্টস কেনো বলে এগুলোকে?

👉কারণ, এগুলো আমাদের গোপন ও ব্যক্তিগত জায়গা, যা কেউ স্পর্শ করতে পারে না, দেখতে পারবে না বা এসব নিয়ে কোনো খেলাও খেলা যাবে না।

৩)কোনগুলো তোমার শরীরের প্রাইভেট পার্টস?

👉ছেলেদের ক্ষেত্রেঃ পেনিস(penis), স্ক্রোটাম(scrotum), নিতম্ব( buttock), thigh, নিপল(Nipples), ঠোঁট (lips)

👉মেয়েদের ক্ষেত্রেঃ ভালভা(Vulva or vagina), স্তন্য( breasts), নিতম্ব( buttock), thigh, ঠোঁট (lips)

৪)কি কি ধরনের আদর আছে/ কি কি ধরনের টাচ আছে?

👉ভালো আদর আর খারাপ আদর,/ গুড টাচ আর ব্যাড টাচ

৫)ভালো আদর(গুড টাচ) কোনগুলো?

👉যে আদর পাবলিক পার্টস বা খোলা অংশে করা হয়, যেমন কেউ হাতে ধরতে পারে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারে।

৬)খারাপ আদর(ব্যাড টাচ) কোনগুলো?

👉জামার নিচে বা প্রাইভেট পার্টস ও এর আশেপাশের জায়গায় যদি কেউ স্পর্শ করে।

৭)কেউ যদি প্রাইভেট পার্টস এ হাত দেয় বা আদর করতে চায় বা খেলতে চায় এটাকে কি বলে?

👉সেক্সুয়াল এবিউস বা শ্লীলতাহানি/ যৌন হয়রানি

৮)কে কে করতে পারে সেক্সুয়াল এবিউস?

👉অপরিচিত বা পরিচিত, যেমন দারোয়ান, ড্রাইভার, আংকেল বা শিক্ষক যে কেউ। তাদের ধারণা দিন যেই হোক তা এসে বাবা মা কে বলতে হবে এবং এ ব্যপারে কোনো সংকোচ করা যাবে না।

৯)সেক্সুয়াল এবিউস কোথায় হতে পারে?

👉যে কোনো জায়গায়, নিজের বাসায়, স্কুলে, যানবাহনে, তবে বাচ্চাদের এ নিয়ে ধারণা দিন, যেখানেই হোক তা অবশ্যই সম্ভব হলে সাথে সাথে বাবা মায়ের নজরে আনতে হবে।

১০) এবিউসাররা(দুষ্টু লোকেরা) সাধারণত কি বলে থাকে বাচ্চাদের ভয় দেখানোর জন্য, এগুলো কি সত্য?

👉তুমি যদি কাউকে বলো তাহলে তোমাকে মেরে ফেলবো/যাকে বলবে তাকে মেরে ফেলবো/ তোমার বাবা- মা তোমাকে বিশ্বাস করবে না, তোমাকে অনেক বকা দিবে, মারবে/তুমি যদি কাউকে বলো তাহলে তুমি মারা যাবে – কিন্তু এই কথাগুলো একদম ভুল।

*** বাবা মায়েরা খেয়াল করবেন, বেশীরভাগ বাচ্চারাই কিন্তু ভয় পেয়ে ব্যপারগুলো শেয়ার করতে চায় না। কোনো কোনো বাবা মায়েরা সন্তানের সাথে এতো জবরদস্তির ব্যবহার করেন যে বাচ্চারা ছোট কোনো সমস্যা ও তাদের সাথে শেয়ার করতে ভয় পায় বা সংকোচ করে। তাই বলবো আগে থেকেই বাচ্চার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার ট্যান্ডেন্সি তৈরি করুন যাতে ভবিষ্যতে কোনো বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

১১) কি হবে যদি দুষ্টু লোকেরা তোমাকে খারাপ আদর করে বা সেক্সুয়ালি এবিউস করে আর তুমি কাউকে না বলো?

👉দুষ্টু লোক তোমার সাথে এই কাজ বার বার করতে থাকবে, আর তোমাকে হুমকি দিতেই থাকবে। তুমি ভয় পাবে, তোমার পড়ায় মনোযোগ দিতে পারবে না, খেলায় মনোযোগ দিতে পারবে না, তোমার কিছু ভালো লাগবে না। তুমি পড়াশোনায় খারাপ করবে।

***এভাবেই বলতে হবে এমন নয়, আপনারা আপনাদের মতো সাজিয়ে এই কথাগুলো বাচ্চাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন যাতে ব্যপারটি নিয়ে তারা ধারণা পায়।

আর কিছু বিষয় আপনারাও লক্ষ্য রাখবেন-

❌বাচ্চাদের কখনো কারো কোলে বসতে উৎসাহ দিবেন না, ছেলে বা মেয়ে যেই বাচ্চাই হোক, শত ভালো আংকেল বা আন্টিই হোক। মায়ের কোল ছাড়া আর কোনো কোলে বাচ্চারা এখন আর নিরাপদ নয়।

❌দু বছরের পরে কোনো বাচ্চার সামনে নিজেরাও কাপড় বদলাবেন না, তাদের ও করতে দিবেন না।

❌ছোট বাচ্চাদের জামাই বা বউ, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড এসব ডাকে ডাকা বা খেলা এসব কখনো প্রশ্রয় দিবেন না।

❌বাচ্চারা বাইরে বয়সে বড় বাচ্চাদের সাথে খেলতে গেলেও কি ধরনের খেলা খেলছে ধারণা রাখুন। কারণ বয়সে বড় বাচ্চাদের মাধ্যমে এবিউস হবার ঘটনাও কিন্তু কম নয়।

❌আপনার বাচ্চা কম্ফোর্টেবল বোধ করছে না এমন কারো সাথে জোর করে ঘুরতে বা বাসায় থাকতে বাধ্য করবেন না। তেমনি কোনো আন্টি/আংকেল,ভাইয়া বা আপু হঠাৎ করে অনেক প্রিয় হয়ে উঠলে তার দিকেও দৃষ্টি রাখবেন।

❌হঠাৎ করে যদি কোনো বাচ্চা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে বা খুব বেশি রাগারাগি করছে এমন হয় যে আগে খুব আনন্দোচ্ছ্বল ছিল তাকে একটু বিশেষ নজর দিন তার সাথে কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না।

❌বাইরের জগত থেকে বাজে অভিজ্ঞতা ও ধারণা পাবার আগে নিজে বাচ্চাকে সঠিক তথ্যটি দিন।

❌বাচ্চারা কি মুভি দেখছে, কি গেইম খেলছে, কি বই পড়ছে এসব ভালো করে লক্ষ্য রাখবেন। কখনো দেখা যায় এসব গেইমস ও মুভি থেকে তারা সেক্সুয়ালিটি নিয়ে বাজে ধারণা লাভ করে।

❌আপনাদের যাদের বাচ্চারা অনেক বেশি ইউটিউব বা ফোন ব্রাউজিং করে তারা অবশ্যই ক্যাবল নেটওয়ার্ক এর সেটিংয়ে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অন করে রাখবেন যাতে বাজে এপস, এডভারটাইজিং, এসব তাদের সামনে না আসে।

❌৩ বছরের পর থেকেই বাচ্চাদের নিজেদের প্রাইভেট পার্টস নিজে নিজে পরিস্কার করতে উৎসাহ দিন এবং কেউ সেটা স্পর্শ করতে পারবে না তা বারবার মনে করিয়ে দিন।

❌বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের এডাল্ট নাচ, গান, মুভি এসব থেকে দূরে রাখবেন, এগুলো এদের মানসিক বিকাশের জন্য মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।

❌কখনো যদি আপনার সন্তান কোনো বিশেষ মানুষের ব্যপারে কমপ্লেইন করে, উনি আপনার কাছে যতো ভালোই হোক, ব্যপারটিকে আমলে নিন এবং গুরুত্ব দিন।

মনে রাখবেন- আমাদের হাতে গড়ে উঠছে ভবিষ্যতের বাবা- মায়েরা। তাই তাদের সংশোধন করার আগে নিজেরা সংশোধিত হই। তারাও আমাদের অনুসরণ করবে ইন শা আল্লাহ।

ডাঃ তাজরীন জাহান

Advisor

20 Minute Medical

0 Shares:
Leave a Reply
You May Also Like

ভিটামিন সি এর স্বল্পতায় ভুগছেন না তো !?

দেহের বহুবিধ পুষ্টিচাহিদা পূরণের জন্য ভিটামিন গ্রহণ প্রয়োজন।কেননা কোনো একটি খাদ্য হতে সম্পূর্ণ পুষ্টি পাওয়া যায় না।তার মধ্যে…