উচ্চ মাত্রার প্রোটিন ডায়েটে সাবধান!

উচ্চ মাত্রার প্রোটিন ডায়েটে সাবধান!

যদি কেউ অতিরিক্ত প্রোটিন খাবার খায় তাহলে তাকে হয়তো উচ্চ মাত্রায় মুল্য দিতে হবে।
জ্বি, হ্যাঁ, এটা সত্যি।
আজকালের যুগে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ একটা ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে।
বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে।
বেশ জনপ্রিয় এটা।
বডি বিল্ডিং।
না সত্যিকারের কাজ কর্মের মধ্য দিয়ে নয়।
বরং মা বাপের খেয়ে ঘুমিয়ে জিমে গিয়ে বডি বিল্ড করার প্রবণতা এখন বেশি।
Protein shake.
দারুণ একটা ঈর্ষনীয় drink.
আমার ছেলেদের সাথে বসে এক সময় বিভিন্ন রিয়েলিটি শো দেখতাম টিভিতে,
বিশেষ করে ভিনদেশী।
সেখানে দেখে মনে হত এই protein shake drink পান করা একটা আভিজাত্যের পরিচয় প্রকাশ করে।
প্রয়োজন এর অতিরিক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ ডায়েট এর বিভিন্ন নাম ও রয়েছে, যেমন,
The zone, Atkins or Paleo diet.

সমস্যা কি?

প্রোটিন জীবনের জন্য অপরিহার্য।
দেহ একক কোষ গঠনে এটি ইটের গাথুঁনির মত।
বিভিন্ন ধরনের শরীরবৃত্তীয় রাসায়নিক বিক্রিয়া,
শরীরের বৃদ্ধি, গঠন এবং ক্ষত মেরামতের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য।
শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রধান তিনটি macronutrients এর একটি হচ্ছে প্রোটিন।

কি হয় অতিরিক্ত গ্রহণে???

# বলা হয় খুব বেশি পরিমাণে গ্রহনে কিডনি তে পাথর হতে পারে।

# রেড মিট যুক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে সাথে saturated fat ও বেশি গ্রহণ হয়, ফলে সৃষ্টি হয় হৃদরোগ, কোলন ক্যান্সার এর মতো রোগের।

# বডি বিল্ড এর জন্য অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণে রক্তে মেক্রোফেজ নামক সেলের কার্যক্রম এলোমেলো হয়ে যায়।
সাধারণ ভাবে রক্তে মেক্রোফেজ এর কাজ হচ্ছে আমাদের রক্তনালি বিশেষ করে ধমনীকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করা।
এই সেল ধমনীতে সৃষ্ট প্লাক, কলেস্টেরল ইত্যাদি পরিষ্কার করে রক্ত প্রবাহ কে স্বাভাবিক রাখে।
কিন্তু অতিরিক্ত প্রোটিন থেকে উদ্ভূত এমাইনো এসিড একে সংকেত পাঠায় তার স্বাভাবিক কাজ না করার জন্য এবং অতিরিক্ত বংশ বৃদ্ধি করার জন্য।
আর সংকেত পেয়ে ম্যাক্রোফেজও তার স্বাভাবিক কাজ বন্ধ করে দেয় এবং অতি দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে।
ফলে ধমনিতে প্লাক বেড়ে যায় আর অতিরিক্ত ম্যাক্রোফেজ মরে গিয়ে আরো বেশি প্লাক তৈরি করে।
ফলে ধমনী মোটা হয়ে যায় এবং শক্ত হয়ে যায় এবং রক্ত চলাচল বাঁধা প্রাপ্ত হয়।
ফলে তৈরি হয় উচ্চ রক্ত চাপ এবং এমনকি হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত।

তাহলে প্রোটিন যারা ভালোবাসে তারা কি করবে?

# আপনার কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কিনা জেনে নিন আগে, বিশেষ করে কিডনির কোনো সমস্যা।
# আপনার প্রোটিন এর সোর্স টি একটি স্বাস্থ্যকর খাবার ব্যবস্থা থেকে গ্রহণ করুন। যেমন,
low fat dairy products, fish, nuts and beans থেকে।
# আপনার প্রোটিন খাবার সারাদিনের খাবার গ্রহণের মধ্যে মিলিয়ে দিন।
# সবচেয়ে ভালো হয় একটি ভালো সুষম খাবার গ্রহণ কে অনুসরণ করলে, যেমন,
Mediterranean diet অথবা DASH diet এর মতো কোনো কিছু কে অনুসরণ করলে।

কিভাবে বুঝবেন আপনি অতিরিক্ত প্রোটিন নিচ্ছেন?

১। আপনার ঘন ঘন মুত্র ত্যাগ এর অনুভূতি হবে।
কারণ অতিরিক্ত প্রোটিন মুত্রনালী এক সাথে শোষণ করে নিতে পারে না ফলে কিডনি তে অতিরিক্ত অম্ল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
ফলে আস্তে আস্তে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয় আর পরবর্তীতে কিডনি তে পাথর তৈরি হয়।

২। অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরে blue mood সৃষ্টি করে। ফলে তার মধ্যে দেখা দেয় anxiety, depression, negative feeling.
বিশেষ করে শর্করা জাতীয় খাবার যদি খুব কম গ্রহণ করে। কারণ brain এর খাবার হচ্ছে glucose.

৩। দেখা দিতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য।

৪।অনেক সময় অতিরিক্ত প্রোটিন প্রথমে ওজন কমালেও পরবর্তীতে আরও ওজন বাড়ায়। কারণ দীর্ঘ দিন এই ধরনের ডায়েট খাবারের প্রতি অতি আকর্ষণ তৈরি করে।

৫। সারাক্ষণ ক্লান্তি বোধ করা। নিয়মিত ঠিক ঠাক মতো বিশ্রাম আর ঘুমানোর পরও বিভিন্ন কারণে শরীর ক্লান্ত বোধ করে — কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ, হাড় ও লিভার এর অতিরিক্ত কাজ করা, এবং কম পরিমাণে শর্করা গ্রহণ এর ফলে মস্তিষ্কে খাবার কম পৌঁছানোতে।

৬। দুর্গন্ধ যুক্ত নিশ্বাস। বিশেষ করে যারা কিটো ডায়েট অনুসরণ করেন তাদের শরীরে তৈরি হওয়া অতিরিক্ত কিটোন বডি এই জন্য দায়ী।

লেখকঃ

ডাঃ সালমা নাহিদ,
সহকারী অধ্যাপক, হৃদরোগ,
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ।

0 Shares:
You May Also Like
Read More

প্যারেন্টিং

প্যারেন্টিং – স্বতন্ত্র একটি মানুষকে গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব, নিঃসন্দেহে চ্যালেন্জিং। এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে যেয়ে হিমশিম খাওয়া,…