⚠️হাত পা হলুদ মানেই কি জন্ডিস ⁉️
* রোগীর/ বাবুর মা : অামার বাবুর আড়াই বছর, আজ দু- তিন মাস ধরে হাত -পা হলুদ লাগতেছে। কতো ডাক্তার দেখাইলাম, বাবুর জন্ডিসটাই ধরতে পারে না।সব টেস্ট করাইছি। কোন রোগ ধরা পড়ে না। বাবুটার হাত-পা দিন দিন হলুদ হইয়া যাইতেছে। কালকে কবিরাজ দিয়া ঝাড়ায়ে নিয়া আসছি ওর দাদীর কথায়।

– বাবুর কি কোন জ্বর আছে? – বমি হয়? – খাবারে অরুচি আছে ? – পেট ব্যাথা করে? – প্রস্রাব,পায়খানা কি স্বাভাবিক আছে?
বাবুর মা : সব ঠিক আছে, ওর রুচি অনেক ভালো মাশা আল্লাহ, খাবার-দাবার ও ঠিক মতো খায়। কোনো সমস্যা নাই।
– Clinical examination করেও তেমন কিছু পাওয়া গেলো না। শুধু হাত ও পায়ের তালুতে হলদে ভাব আছে। কিন্তু চোখ, মুখের ভেতর বা জিভেও কোনো হলদে ভাব নেই।
পেটে পরীক্ষা করেও লিভার বা spleen স্বাভাবিক মনে হলো।পূর্বের ডাক্তারের advice অনুযায়ী করা রিপোর্ট গুলো দেখেও অস্বাভাবিক কিছু চোখে পরলো না।
S. Bilirubin = 0.6 mg/dl.USG of W/A = Normal studyS.ALT = 30 IUCBC – normal
– মাকে জিজ্ঞেস করা হলো – মা ও কি এখন কোন ঔষধ খাচ্ছে ?
– বাবুর মাঃ না।
– কোন ড্রেস বা কাপড় থেকে রং উঠে লাগে কিনা?
– বাবুর মা – না, ওর তো হলুদ কোন ড্রেস ও নাই।
– ও কি কি খাবার খায়?
– বাবুর মা – ওরে ২ বেলা খিচুড়ি খাওয়াই। সবজি দিয়ে রান্না করি।
– কি কি সবজি দেন?
– বাবুর মা – আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, এক এক দিন এক একটা । তয় মিস্টি কুমড়া ওর খুব পছন্দ। মিস্টি কুমড়া ছাড়া খাইতেই চায় না, আর গাজরও খায় প্রায় প্রতিদিন।
– মা, অামরা মনে হয় অাপনার বাবুর রোগটা অামরা ধরতে পেরেছি। এটাকে ডাক্তারি ভাষায় Carotenemia বলে।
ওকে অাপনি গাজর এবং মিষ্টি কুমড়া খাওয়ানো টা কমিয়ে দিন অথবা কয়েক মাস বন্ধ রাখুন। দেখবেন হাত-পায়ের হলুদভাব টা চলে গেছে। অন্য সব শাক সবজি খেতে পারবে।
এমনিতে Carotenemia তে বাবুদের কোন ক্ষতি হয় না, হাত পায়ের হলুদভাব ছাড়া।
– বাবুর মা – তাহলে কোন ঔষধই লাগবে না।
– জি না, মা।
সন্তুষ্ট চিত্তে মা বাবুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন।
এখন আসি বিস্তারিত লেখায়, ক্যারোটেনেমিয়া বা Carotenemia বিষয়টি আসলে কি?
** Carotenemia : যদি রক্তে স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি বিটা ক্যারোটিন উপস্থিত থাকে তাকে Carotenemia বলা হয়, যার কারণে হাত পায়ের তালু অস্বাভাবিক হলুদ বর্ণ ধারণ করতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে চোখ ও মুখ গহবরের হলদেটে ভাব থাকে না এবং সেরাম বিলিরুবিন স্বাভাবিক থাকে। এভাবে সাধারণ জন্ডিস থেকে একে আলাদা করা যায়।
** কি কি কারণে এমন হতে পারেঃ১) অত্যধিক হারে বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার বা জুস খেলে যেমন,বেশি করে গাজর, মিস্টি কুমড়া, পাকা আম বা পাকা পেঁপে বা এগুলোর জুস খেলে। ২) শারিরীক কোনো কারণে ক্যারোটিনয়েড থেকে ভিটামিন-এ তে পরিবর্তিত হবার প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা থাকলে।
ধরুন, যদি প্রতিদিন ১০টি গাজর ২ সপ্তাহ ধরে খাওয়া হয়, তাহলে অতিরিক্ত বিটা ক্যারোটিন ত্বকের নিচে জমা হয়। যে কারণে ত্বকের বর্ণ হলদেটে বা কমলা ধরনের হয়ে যায়।
** চিকিৎসাঃ – – শুধুমাত্র ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার কম খেলে বা ২-৩ মাস বাদ দিলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয়না যদি না অন্য কোনো সমস্যা থেকে থাকে।
** Carotenemia সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়, এটা টক্সিক নয় এবং সাধারণত এর কারণে অন্য কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।
** ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার কম খেলে বা বন্ধ রাখলে কয়েক মাসের মধ্যেই শিশুর ত্বকের বর্ণ আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে।
এ কারণে বাচ্চাদের যেকোনো এক জাতীয় খাবার প্রতিদিন না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবারে অভ্যস্ত করার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। গাজর, মিস্টি কুমড়া এগুলো প্রতিদিন না দিয়ে সপ্তাহে ২-৩ দিন দেয়া যেতে পারে। এটার জন্য একদমই গাজর বা মিস্টি কুমড়া দেয়া বন্ধ করে দেয়া যাবে না, সেক্ষেত্রে ভিটামিন এ এর পুষ্টি ঘাটতি দেখা যেতে পারে। সব রকমের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারের সুষম বন্টনের মাধ্যমেই শিশুদের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব।
ডাঃ তাজরীন জাহান(MBBS)
Advisor 20 Minute Medical