
সেক্স এডুকেশনঃ কি শেখাবো, কখন শেখাবোঃ
পর্ব-১:
লেখার টপিক দেখেই “নাউজুবিল্লাহ” বলে একদল স্কিপ করে যাবেন, আবার কিছু অত্যুৎসাহী জনগণ ১৮++ কন্টেন্ট এর খোঁজে উঁকিঝুঁকি দিবেন। তবে যারা সচেতন তারা ঠিকই মনোযোগ দিয়ে পুরো পোস্টটি পড়ার এবং বোঝার চেষ্টা করবেন।
সেক্স এডুকেশন আসলে কি? এটা কি আসলেই শুধু নারী পুরুষের গোপন সম্পর্ক নিয়ে জ্ঞান নাকি আরো কিছু জানার আছে?
সেক্স এডুকেশনে আসলে নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও ইমোশনাল এটাচমেন্ট, সেক্সুয়াল ইস্যু বিষয়ে সামাজিক, ধার্মিক এবং স্বাস্থ্যগত কি কি জ্ঞান আছে, মানব শরীরের সেক্সুয়াল ও রিপ্রডাকটিভ এনাটমী, নিরাপদ সেক্স, যৌন রোগ, সেক্স রাইটস বা অধিকার, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সমূহ, নিজের প্রাইভেসি জ্ঞান ও প্রাইভেট পার্টস এর সুরক্ষা, গুড টাচ, ব্যাড টাচ এরকম অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এটা শেখার কি সুবিধা রয়েছে, কেনো জানতে হবে বা জানাতে হবেঃ
– ছোট বাচ্চা যারা আছে তারা নিজেদের প্রাইভেট পার্টস পরিস্কার রাখার প্রয়োজনীয়তা বুঝবে, এর ফলে বিভিন্ন ধরনের অসুখ বিসুখ, ইনফেকশন এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
– বাচ্চাদের যৌন নির্যাতন, চাইল্ড এবিউস নিয়ে ধারণা দেয়া যায়, চাইল্ড এবিউস হবার হার কমবে কারণ সতর্কতার হার বাড়বে। এর সাথে সাথে বাচ্চা ও বাবা- মায়ের মধ্যে এসব বিষয়ে কথা বলার ইন্টিমেসি ও বাড়ে যার কারণে বাচ্চার সাথে অযাচিত কিছু হলে সেটা প্রকাশ করতে সময় ভয় পাবে না।

– বড় বা টিনএজ যারা আছে তারা কখন থেকে সেক্সুয়াল রিলেশন এ যাওয়া উচিত তা নিয়ে ধারণা পায়। অযাচিত গর্ভপাত, চাইল্ডহুড প্রেগন্যান্সি এসবের হার কমে।
– বাচ্চারা পারিবারিক সম্পর্ক গুলো কেনো প্রয়োজন এবং সেইফ সেক্স, জন্ম নিরোধক, সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড অসুখ, শরীরের হরমোনাল চেঞ্জ, ঋতুস্রাব ও সে সময়ের যত্ন এসব নিয়ে ধারণা পায়।
#কখন জানাবোঃ
এটা জানা খুব জরুরি। বয়স অনুযায়ী কার কতটুকু জানতে হবে, কিভাবে জানাতে হবে না জানলে ভুল সময়ে ভুল তথ্য চলে গিয়ে এই শিক্ষার সঠিক প্রয়োগ ব্যাহত হতে পারে, অকালপক্ব জেনারেশন তৈরি হতে পারে।
০-৩ বছরঃ
এই সময় সবার আগে যেটা উচিত, বাচ্চাদের নিজের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে ধারণা দেয়া উচিত। এই ধারণা দিতে গিয়ে আমরা মাথা কে মাথা, হাত কে হাত আর পেনিস কে শেখাই নন্টু/টন্টু, আরও অনেক নামে। কিন্তু সবার আগে যার যার শরীরের প্রতিটি অংগের নাম সঠিক শেখাতে হবে। বাংলায় না পারলে ইংরেজিতে শেখাতে হবে।
এভাবে করে প্রথমেই তাদের বোঝাই এটা সংকোচের জায়গা। এই জাতীয় কথা বার্তাই সংকোচ করার মতো। আসলে শেখাতে হবে যাতে সংকোচ না করে বাবা মায়ের কাছে এ সংক্রান্ত যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে, এটাও সাথে বলতে হবে এগুলো প্রাইভেট কথা, সবার সামনে জোরে বলতে হবে না, শুধু গার্জিয়ান কে বলবে।
সবার আগে প্রতিটি বডি পার্টসের সঠিক নাম শেখাতে হবে, আর ছেলে মেয়ের বডি পার্টস গুলো আলাদা, সেসব শেখাতে হবে। কেনো সে ছেলে, বা কেনো সে মেয়ে, এগুলো বইতে ছবি দেখিয়ে শেখানো যেতে পারে।
বাচ্চাদের ডায়াপার বা জামা-কাপড় কখনোই বাইরের লোকের সামনে চেঞ্জ করা যাবে না। এসব নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক বয়স্ক মুরব্বিগণ বাচ্চাদের প্রাইভেট পার্টস ধরে টানাটানি করে, বাজে তামাশা করে, এগুলো একদম প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। ছোট বাচ্চাদের দুধের বোঁটা গেলে দিতে হবে – এধরণের বাজে কথায় কান দিয়ে খোঁচাখুঁচি করে অনেক ইনফেকশন এর রোগী পাওয়া যায়। সমস্যা থাকলে চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হতে হবে।
আর আমরা যখন তাদের সাথে গল্প করি, তখন গল্পের ছলে বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছিল, এরপর হাসপাতালে গিয়ে আম্মুর পেট থেকে বেবি এসেছে এইটুকু বলা কি অনেক খারাপ গল্প!! তা না করে পাখি এসে দিয়ে গেছে, ফুলের থেকে বের হয়েছে – এসব অতি রঞ্জিত গল্প বলতে গিয়ে পরে বড় হয়ে বাচ্চা ভাববে আব্বু আম্মু মিথ্যা বলেছিল।
ছোট বাচ্চাদের সাথে আপনি কিভাবে এই বিষয় গুলো ডিল করছেন, কিভাবে তাদের ইজি করছেন, সেটার উপরেই কিন্তু পরবর্তীতে আপনি তাদের সাথে কিভাবে এই নিয়ে আলোচনা করবেন তা সহজ হবে। আপনি কোনোদিন এই বিষয় গুলো নিয়ে তার সাথে আলোচনা করেন নি, ধুম করে ১৫ বছরের একটা ছেলে বা মেয়ে আপনার সাথে এই নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত থাকবে না। তাই ছোটবেলা থেকেই এসব বিষয়ে বাচ্চাদের সাথে নিঃসংকোচে কথা বলা আয়ত্ত করার চেষ্টা করবেন।
এর পরের পর্বে থাকবে ৩ বছরের পরে বাচ্চাদের কি জানাবেন, কিভাবে জানাবেন।
ডাঃ তাজরীন জাহান
Advisor