মায়েদের_জিজ্ঞাসাঃ কিভাবে সলিড দেয়া শুরু করবোঃ
নতুন মায়েদের সবচেয়ে কমন যেই জিজ্ঞাসা তা হলো, ছয় মাস বয়সী বাচ্চার খাবারের তালিকা কি হবে।
শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি হলে তার পুষ্টি চাহিদা বেড়ে যায়। তাই মায়ের দুধের সাথে পরিপূরক খাবার দেয়ার প্রয়োজন হয়। শিশুর পরিপূরক খাবার হওয়া উচিত সুষম। কারন শিশুর পাকস্থলী থাকে ছোট। তাই স্বল্প পরিমাণে খাবার যেন শিশুর পুষ্টি চাহিদা মেটে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
সাধারণত বাংলাদেশে ৬ মাস শেষ হয়ে ৭ মাসে পরলে তারপর সলিড শুরু করতে বলা হয়। এর আগে পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ বা ফরমুলা দুধ ই শিশুর একমাত্র খাবার।
এরপর যখন শিশু তৈরি হয় সলিড নেবার জন্য, মায়েদের চিন্তা থাকে শুরুটা আসলে কিভাবে হওয়া উচিত। তাকে কয় বেলা খাবার দেয়া উচিত বা কতটুকু দেয়া উচিত।
একটি শিশু যখন সলিড খাবার শুরু করে,তখন শুরুতেই ৩ বেলা বড়দের মতো খাবার দিতে যাবেন না।
একদম শুরুটা হবে খুবই মিহি কিছু দিয়ে, হতে পারে সব্জি বা ফলের পিউরি সেটা দিবেন ১-২ চা চামচ পরিমাণ, শুধুমাত্র একবেলা, সেটা সকাল বেলা হলে ভালো হয়। এভাবে করে যখন বাচ্চা সহ্য করতে পারবে তখন প্রতি সপ্তাহে একটু একটু করে পরিমাণ ও দু বেলা তারপর তিনবেলা এভাবে বাড়াতে পারেন।
খুব জরুরি যে কথাটা মনে রাখা প্রয়োজন, যে কোনো খাবার দেয়ার পরে লক্ষ্য করবেন,বাচ্চার পেটে গ্যাস হচ্ছে কি না, পায়খানায় কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, কোনো ধরনের এলার্জি হচ্ছে কি না। যে কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হতে হবে।
ফল বা যে কোনো টুকরো খাবার হাতে দেয়ার সময় অবশ্যই বড় কেউ সামনে থাকবেন যাতে গলায় আটকে না যায়, এবং ছোট ছোট টুকরো করে দিবেন। আঙুর বা বাদাম জাতীয় ফল গুলোও ছোট টুকরো করে দিতে হবে যাতে গিলে ফেললেও গলায় না আটকায়।
কি রকম ঘনত্বের খাবার দেয়া উচিতঃ
🔸যখন ছয় মাসের পরে প্রথম শুরু করা হয়,সেটা হবে একদম মিহি ও তরল। কারণ তখনও শিশু মাড়ি বা জিভের ব্যবহার বুঝতে পারে না। আস্তে আস্তে একটু একটু দানাদার খাবার দেয়া শুরু করতে হবে যেনো শিশু তার মাড়ি ও জিভের ব্যবহার করতে শেখে।
🔸পরের মাসে একটু দানাদার দেয়া যায়। যেমন পাকা কলা বা সেদ্ধ আলু কাঁটা চামচে বা হাতে চটকে দিলে যেমন হবে। নরম করে মাছ,চিকেন এসব ও দেয়া যায় এসময়। আর দিতে পারেন টক দই, যা বাচ্চাদের পেটের জন্য খুব ভালো।
🔸৮-৯ মাসের দিকে শিশু কিছু ধরতে চায়। তখন তার চোখ ও হাতের কো অর্ডিনেশন বাড়ানো যায় ও একা খেতে উৎসাহ দেয়া যায়। তখন তাকে ফিঙ্গার ফুড দিতে পারেন, যেমন বিস্কুট, চীজ, নরম করে সেদ্ধ করা গাজর বা আলু, বা কোনো সবজি। আর তাকে বাটি চামচে একা খাবার খেতে দেয়া যায়। সে ফেলবে, ছড়াবে, এলোমেলো করবে, এভাবেই শিখে যাবে। অবশ্যই এসময় শিশুদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গলায় খাবার আটকে না যায়।
এখন আসি কি কি খাবার একেবারেই দিবেন না।
১) মধু- মধু ১ বছরের আগে কখনোই দেয়া যাবে না। ১ বছরের কম বাচ্চাদের অন্ত্রের অপরিপক্কতার কারণে মধুর থেকে জীবাণু গিয়ে ইনফ্যান্ট বটুলিজম করে, যা অনেক ক্ষেত্রে প্রাণঘাতি ও হতে পারে।
২) কাঁচা ডিম বা কাঁচা ডিমের তৈরি খাবার যেমন মেয়োনিজ, এগুলোতে ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া থাকে যা বাচ্চার ডায়রিয়া করতে পারে।
রান্না করা ডিম যেমন সেদ্ধ বা খাবারের সাথে রান্না করা দেয়া যাবে। কিন্তু ১ বছরের আগে শুধু কুসুম দিতে বলা হয় কারণ ডিমের সাদা অংশের প্রোটিন থেকে অনেক শিশুর এলার্জি হতে পারে।
৩)গরুর দুধ, ছাগলের দুধ, সয়া মিল্ক,নারিকেলের দুধ- কোনোটাই দুই বছরের আগে দেয়া যাবে না চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া।
৪)গলায় আটকে যেতে পারে যেমন বাদাম বা শক্ত খাবারের ক্ষেত্রে বেশ সাবধান থাকতে হবে।
৫) বাজারের জুস, চকোলেট, চিপস এসব না দেয়াই ভালো।
তাছাড়া আজকাল ৪-৫ পদের চাল-ডাল মেশানো হোমমেড সিরিয়াল মায়েদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। এগুলো দেয়ার পরে বাচ্চাদের হজমের সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া বিবিধ সমস্যা দেখা যায়। এগুলো মোটেও ৬ মাস থেকে ১ বছর এর বাচ্চার উপযোগী নয়। এগুলো কখনোই বাচ্চার উইনিং ফুড হিসেবে রাখা উচিত নয়।
ডাল ও অনেক সময় বাচ্চাদের গ্যাসের সমস্যা করে, তাই ৮ মাসের পর থেকে ডাল অল্প করে শুরু করে আগে দেখতে হবে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না।
মনে রাখবেন, ৬ মাস থেকে এক বছর, তখনও শিশুর প্রধান খাবার বুকের দুধ বা ফরমুলা দুধ। এই সময় শিশু বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাবে। এসময় হলো শিশুকে বিভিন্ন খাবার, স্বাদ, বর্ণ,গন্ধ এগুলোর সাথে পরিচিত করানোর সময়। তিন বেলা রুটিন করে যে বাঁধা ধরা খাবারের তালিকা মায়েরা চান সেটা ১ বছরের আগে প্রযোজ্য নয়।
১ বছরের পরে শিশু অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বুকের দুধ বা ফরমুলা দুধ খাবে।
ডাঃ তাজরীন জাহান
Advisor
20 Minute Medical